অর্থ-সরবরাহের সংজ্ঞা লিখুন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কীভাবে অর্থ সরবরাহের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে? বর্ণনা করুন।
Define money supply. Describe how the central bank influence the process of money supply.
উত্তর: অর্থ সরবরাহ: সাধারণ অর্থে, অর্থ সরবরাহ বলতে দেশের সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত মোট বিহিত মুদ্রার পরিমাণকে বুঝায়। কিন্তু মুদ্রা বলতে চেক, ক্রেডিট কার্ড বা এমন কোনো দলিলকে বুঝায় যা অর্থের মতো ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অর্থের উপযোগ বাড়ে। অবশ্য চেক বা এরূপ দলিল ব্যাংক আমানতের বিপক্ষে ব্যবহার করা যায়। তাই বিহিত মুদ্রার সাথে ব্যাংক আমানত এবং তা থেকে সৃষ্ট চেক, ড্রাফট্ ইত্যাদির অর্থ সরবরাহ পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে।
বিহিত মুদ্রা উত্তোলনযোগ্য আমানত থেকে যেমনি অর্থ সরবরাহ পরিস্থিতি পরিমাপ করা যায় তেমনি বিহিত মুদ্রার অবর্তনও সেই সাথে চেক বা আমানতের আবর্তন (Velocity) অর্থ সরবরাহের উপর প্রভাব বিস্তার করে। অর্থাৎ আবর্তন যত বেশি অর্থের সরবরাহ বা উপযোগও ততই বৃদ্ধি পায়। যার কারণে বিহিত মুদ্রা, ব্যাংক আমানতও তা হতে সৃষ্ট মুদ্রা এবং মিলিয়েই কোনো নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট দেশে অর্থ সরবরাহ পরিস্থিতি পরিমাপ করা হয়ে থাকে।
জি. আর. খান. ও এম এ. আজিজ এ সম্পর্কে বলেছেন, “কোন নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশের মুদ্রার মোট সর (Money Supply) বলতে বিহিত মুদ্রা ও ব্যাংক মুদ্রার পরিমাণকেই হিসাবের মধ্যে গণ্য করা হয়। অন্য কথায় কোনো দেশের কারেন্সি ও ব্যাংক মুদ্রা মিলেই সে দেশের মুদ্রা সরবরাহ গঠিত।
M. C. Vaish, বলেন “In short the total money supply is the circulation in the economy • equals MV + M1 V1” অর্থাৎ, আবর্তন বিবেচনায় আনলে সংক্ষেপে মোট মুদ্রা সরবরাহ সমান হলো {(বিহিত মুদ্রা (M) × বিহিত মুদ্রার আবর্তন (Velocity)} + {ব্যাংক মুদ্রা (M1) × ব্যাংক মুদ্রার আবর্তন (Velocity)}।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, একটা দেশে নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইস্যুকৃত নোট ও মুদ্রার পরিমাণ ও ব্যাংক আমানতের বিপক্ষে সৃষ্ট ব্যাংক মুদ্রা অর্থাৎ চেক, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি হস্তন্তরযোগ্য দলিল এবং সেই সাথে উভয় মুদ্রার বিভিন্ন হাত আবর্তনের পরিমাণ দ্বারা সারা দেশের অর্থ সরবরাহের পরিমাণ নির্ণীত হয়। উল্লেখ্য, ব্যাংক যে ঋণ মঞ্জুর করে তাও যেহেতু ঋণ আমানত হিসেবে গণ্য হয় এবং অর্থ চেকের দ্বারা উত্তোলনযোগ্য তাই ঋণদান স্বাভাবিবারেই অর্থ সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
একটি দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে নগদ অর্থ সৃষ্টি করে: অর্থ হলো একটি দেশের মূল চালিকা শক্তি। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে অর্থ ছাড়া উপায় নেই। বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে অর্থের ব্যবহার যথেষ্ট। বিনিময়ের গতি তথা অর্থের প্রচলন গতি যত বেশি হবে, ততই বুঝতে হবে অর্থের ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। দেশে কতটা নগদ অর্থ প্রয়োজন, সেটা বিচার বিশ্লেষণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি নগদ অর্থ ইস্যু করতে পাবে। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ সৃষ্টি করতে পারে। আমানত ভিত্তিতে ঘুণিতক ঋণ সৃষ্টির প্রক্রিয়া দ্বারা বাণিজ্যিক ব্যাংক অর্থ যোগানের উৎস হিসাবে ভূমিকা রাখে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংক কতটা ঋণ প্রেক্ষিতে অর্থের যোগান বাড়াতে পারবে, তা পরোক্ষভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করে দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক হার, খোলা বাজার কারবার, নগদ রিজার্ভের অনুপাত পরিবর্তন করে ঋণের যোগান তথা অর্থ যোগানের উপর পরোক্ষ ভূমিকা রাখে। সরকারের সাথে উপযুক্ত পরামর্শ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদ অর্থ বাজারে ছাড়ে।
পূর্বে স্বর্ণ সংরক্ষণের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদ অর্থ ইস্যু করত। নির্দিষ্ট মূল্যে স্বর্ণ বা অন্য মূল্যবান ধাতব পদার্থ কোষাগারে রেখে নগদ অর্থ ইস্যু করত। কেউ যদি কাগজের নোট নিতে অস্বীকার করত, তবে তার চাহিদা অনুসারে উক্ত নোটের জন্য সমমূল্যের স্বর্ণ তাকে প্রদান করা হতো। এই ব্যবস্থায় কাগজি নোটের উপর মানুষের আস্থা ছিল বেশি। কিন্তু অসুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো এই যে, কোন কারণে দেশে স্বর্ণের যোগান বৃদ্ধি বা হ্রাস পেলে আনুপাতিকভাবে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পাবে বা হ্রাস পারে। তখন সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ সরবরাহকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না। পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, স্বর্ণের মতো দুষ্প্রাপ্য ধাতব পদার্থকে কোষাগারে আটক রাখার কোন যুক্তি নেই। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা নির্দিষ্ট পরিমাণে সঞ্চিত তহবিলে রাখবে। সেই সঞ্চিত তহবিল হাতে রেখে প্রয়োজনমতো নোট ছাপাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।